বিশেষ প্রতিবেদক
ক্যাসিনো কাণ্ডসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত ছিল যুবলীগ। এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কালিমা মোচন করতে নড়েচড়ে বসেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণার সাথে সাথে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় বিতর্কিতদের। আটক করা হয় এক সময়ে রাজত্ব কায়েম করা সংগঠনটির বাঘা-বাঘা নেতাদের।
এরপর থেকে লাগাতার অভিযান চালানো হয়। যেখানেই দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকের সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানেই চলেছে অভিযান। ছাড় দেওয়া হয়নি কাউকে। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে সুবিচার কায়েম করে দেশবাসীকে জানান দিয়েছেন আইন সবার জন্য সমান। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে অপরাধীর বড় পরিচয় অপরাধী। অপরাধী কোনো দলের হতে পারে না। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠায় সরকার ছিল মরিয়া।
যার ফলশ্রুতিতে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা ক্লিন ইমেজ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠপুত্র পরিচিত শেখ ফজলে শামস পরশকে দেওয়া হয় ইমেজ পুররুদ্ধারের দায়িত্ব। মূলত হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতেই যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে ।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তারা দুইজন যুবলীগকে পরিচ্ছন্ন সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে গেছেন । ক্যাসিনোকান্ড, পদ বাণিজ্য ও নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় যুবলীগের শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। একটু সময় লাগলেও যুবলীগকে বিতর্কিতদের অভয়ারণ্য থেকে মুক্ত করতে পেরেছেন এ দুজন। জাতীয় কংগ্রেসের প্রায় একবছর পর ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ।
এক সময় যুবলীগ মানেই ত্রাসের সংগঠন মনে করা হলেও বর্তমান কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়া হয়নি। কমিটিতে স্থান দেয়ার ব্যাপারে বিবেচনায় ছিল শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা ও ত্যাগের বিষয়টি।
এছাড়াও বহিরাগতদের ব্যাপারেও সতর্ক ছিল সংগঠনটি। কারো সুপারিশেও কাউকে পদায়ন করা হয়নি। বলা চলে শতভাগ নিরেপেক্ষতার সাথে যাচাই-বাছাই করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার ফলে হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে সংগঠনটি।
বিগত এক বছরে যুবলীগের কর্মকাণ্ড: হারানো ইমেজ ফেরাতে মরিয়া যুবলীগ চেয়ারম্যন পরশ ও সাধারণ সম্পাদক নিখিল দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কাজ করে গেছেন অবিরাম। দায়িত্ব পাওয়ার পরপর মাথার উপর ঝেকে বসে করোনা। প্রাণঘাতী করোনায় সবাই যখন ভয়ে নতজানু অবস্থায় ছিল। সেসময়ে দুঃসাহসী ভূমিকায় ছিলেন যুবলীগ। করোনার ঝুঁকি মানুষের পাশে দায়িয়েছে সংগঠনটি। শুধুমাত্র রাজধানীতে তাদের কার্যক্রম সীমাদদ্ধ ছিল না। সারাদেশের তৃণমূল কর্মীদের সুসংগঠিত করে অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছে তারা। ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন তারা। সারাদেশে লকডাউনের সময় খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করাও ছিল মানবিক সেবায় তাদের অতুলনীয় এক দৃষ্টান্ত। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থকর্মীদের জন্য রাজধানীর হাসপাতাল, জেলা উপজেলা হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থকেন্দ্রে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছে যুবলীগ। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এরপরে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল বিতর্কমুক্ত কমিটি গঠন করা। একটু সময় লাগলেও সে বিষয়েও তারা সফলতার পরিচয় দিয়েছে। নবগঠিত কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে শিক্ষক, অ্যাডভোকেট, ব্যবসায়ী, আইনজীবিসহ নানা পেশার যোগ্য, মেধাবী ও সৎ লোকদের। যার ফলে বিতর্ক অনেকটাই ঘুচে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এখন শুধু ভালো কাজ দিয়ে মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান করে নেওয়ার সময়।
ঢাকা মহানগর যুবলীগ কমিটিতেও স্থান পাবে না বিতর্কিতরা: সংগঠনটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন মহানগর কমিটিতেও স্থান দেওয়া হবে না বিতর্কিতদের। যাদের গায়ে চুল পরিমাণও বিতর্কের দাগ আছে তাদের ব্যাপারেও সতর্ক যুবলীগ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তৃণমূলকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে খুব শীঘ্রই বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হবে নতুন কমিটি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন যা ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। সংক্ষেপে যুবলীগ নামে সংগঠনটি বহুল প্রচলিত। এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব অঙ্গসংগঠন। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির সাবেক ছাত্র ফজলে শামস পরশ এতদিন রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিত্ব হিসেবে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের আস্থাভাজন হিসেবে তাকে এই গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়। পরশ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধারণ সম্পাদক নিখিলের জন্মস্থান চাঁদপুরের মতলব থানার হরিনা গ্রামে। জন্ম চাঁদপুরে হলেও ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসার সাথেও জড়িত।